মহিলাদের নামাজের সঠিক নিয়ম দলিলসহ
মহিলাদের নামাজের নিয়ম বেশিরভাগ পুরুষের মতোই , তবে এর মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে সামান্য পরিমাণ ভিন্নতা রয়েছে। তবে প্রথম কথা হচ্ছে পুরুষ এবং মহিলাদেরকে কিন্তু একসাথে নামাজ পড়ার কোন বিধান দেয়নি। সুতরাং মহান আল্লাহ তায়ালা পুরুষ এবং মহিলাদের নামাজের সুন্দর নিয়ম বেঁধে দিয়েছে।
সর্বপ্রথম মহান আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক মুসলিম নর নারীর উপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করে দিয়েছে। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মূল একটি স্তম্ভ হচ্ছে নামাজ। এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সহজেই বুঝতে পারি যে নামাজ সঠিক নিয়মে আদায় করতে হবে।
পেজ সূচিপত্র : "মহিলাদের নামাজের সঠিক নিয়ম" বিস্তারিত যেসব উল্লেখ থাকছে
- মহিলাদের নামাজ আর পুরুষের নামাজের ভিন্নতা কেন আছে?
- ইসলামী শরীয়তে নারী-পুরুষের নামাজের বিধান
- নারীদের নামাজ সংক্রান্ত বিশেষ হুকুম
- নারীর নামাজের কতক বিধান পুরুষের নামাজ থেকে ভিন্ন
- নারীদের মসজিদে নামাজ আদায়ের জন্য ঘর থেকে বের হওয়া বৈধ
- কাতারে নারীর অবস্থান
- ঈদের সালাতে নারীদের বের হওয়ার বিধান
- নামাজের বৈঠকে দোয়া সমূহ বাংলায়
- লেখক এর বক্তব্য
মহিলাদের নামাজ আর পুরুষের নামাজের ভিন্নতা কেন আছে?
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পবিত্র হাদিসে স্পষ্টভাবে নারী পুরুষের নামাজের কয়েকটি ভিন্নতার কথা বর্ণিত হয়েছে। ভিন্নতার কথা বর্ণিত হয়েছে পবিত্র হাদিস ও কোরআন শরীফে। আমরা দীর্ঘ দেড় হাজার বছরের ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখতে পাবো যে, তা এমনই শক্তিশালী দলিল সমৃদ্ধ যে, সাহাবীর যুগ থেকে শুরু করে প্রত্যেক যুগেই মুহাদ্দিসগণ এবং মুস্তাহিদ ইমামগণ এর ভিন্নতার পক্ষে তাদের বক্তব্য করেছেন।
ইসলামী শরীয়তে নারী-পুরুষের নামাজের বিধান
ইসলামিক শরীয়তের যে সকল বিষয়ে নারী এবং পুরুষের মাঝে নামাজের বিধান করা হয়েছে এর অন্যতম বিধান হচ্ছে সতর। সব কিছুর ক্ষেত্রে নারীদেরকে এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যাতে তাদের সতর সব সময় পরিপূর্ণভাবে সর্বক্ষণ রহিত /রক্ষিত থাকে। একজন নারীর জন্য সার্বিক বিবেচনায় এমনটি হওয়ায় স্বাভাবিক।
এই স্বাভাবিকতার ধারাবাহিকতায় নারীদের নামাজ আদায়ের জন্য পদ্ধতিও এমন যা তাদের সতর রক্ষায় বেশি উপযোগী হয়েছে।
একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই মহিলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন তাদেরকে সংশোধনের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন।
অর্থাৎ যখন সেজদা করবে তখন শরীর জমিনের সাথে মিলিয়ে রাখবে। কেননা মহিলারা কেননা এক্ষেত্রে মহিলারা পুরুষদের মত নয়। কেননা মহিলারা এক্ষেত্রে পুরুষের মতো নয় এক্ষেত্রে পুরুষের মতো নয় ।
নারীদের নামাজ সংক্রান্ত বিশেষ হুকুম
হে মুসলিম নারীগণ তোমরা সালাতের সকল শর্ত, রুকন ও ওয়াজিবসহ উত্তম সময়ে সালাত আদায় করো। আল্লাহ তা'আলা মুমিন দের মায়েদের উদ্দেশ্যে বলেন ঃ
" আর তোমরা সালাত কায়েম করো যাকাত প্রদান কর এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের অনুগত্য কর"
এ নির্দেশ সকল মুসলিম নারীর জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য কারণ সালাত ইসলামের দ্বিতীয় রুকুন ইসলামের প্রধান স্তম্ভ সালাত ত্যাগ করা কুফরি যা মানুষকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়। যার সালাত নেই সে নারী হোক বা পুরুষ হোক ইসলামের তার কোন অংশ নেই।
নারীর নামাজের কতক বিধান পুরুষের নামাজ থেকে ভিন্ন
নিম্নরূপ আলোচনা করা হলো ঃ
১। নারীদের নামাজে আযান ও ইকামত নেইঃ
আজানের জন্য উচ্চসর জরুরি নারীদের উচ্চ স্বর করা জায়েজ নাই তাই তাদের আযান ও ইকামত বৈধ নাই। তারা আযান ও ইকামত দিলেও তা শুদ্ধ হবে না।
২। নামাজের সময় নারীর চেহারা ব্যতীত পূর্ণ শরীর সতর ঃ
নামাজে নারীর চেহারা ব্যতীত পূর্ণ শরীর তবে সতর , তবে হাত ও পায়ের ব্যবহারের দ্বিমত রয়েছে যদি পর পুরুষ তাকে না দেখে। গায়রে মাহরাম বা পর পুরুষের দেখার সম্ভাবনা থাকলে চেহারা হাত ও পা ঢাকা ওয়াজিব। যেমন সালাতের বাইরে এইসব অঙ্গগুলো আড়ালে রাখা ওয়াজিব। অতএব নামাজের সময় মাথা গর্দান ও সমস্ত শরীর পায়ের পাতা পর্যন্ত ঢাকা জরুরি।
"হায়েযা (ঋতুবতী) নারীর সালাত ওড়না ব্যতীত গ্রহণ করা হয় না" অর্থাৎ ঋতু আরম্ভ হইছে এমন প্রাপ্তবয়স্কা নারীর সালাত। ওড়না দ্বারা উদ্দেশ্য মথা ও গর্দান আচ্ছাদনকারী কাপড়। উম্মে সালমা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত তিনি নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন নারী কি জামা ও ওর নাই উড়নাই সালাত পড়তে পারে নিজের কাপড় ছাড়া ।তিনি বলেনঃ
যদি জামা পর্যাপ্ত হয় যা তার পায়ের পাতা ঢেকে নেই ওড়না ও জামা দাঁড়ায় নামাজ বিশুদ্ধ।এই দুটি হাদিস প্রমাণ করে যে সালাতে নারীর মাথা ও গর্দান ঢেকে রাখা জরুরি হযরত ,যা আয়েশা থেকে বর্ণিত হাদিসের দাবি।
নারীদের মসজিদে নামাজ আদায়ের জন্য ঘর থেকে বের হওয়া বৈধ
মসজিদে পুরুষদের সাথে সালাত আদায়ের জন্য নারীদের ঘর থেকে বের হওয়া বৈধ, তবে তাদের সালাত তাদের ঘরেই উত্তম। ইমাম মুসলিম তার সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন।
“তোমরা আল্লাহর বান্দিদেরকে আল্লাহর মসজিদ থেকে নিষেধ করো না”।
“নারীরা মসজিদে যাবে তোমরা নিষেধ করো না, তবে তাদের জন্য তাদের ঘরই উত্তম”।
উল্লেখ্য পর্দার জন্য নারীদের ঘরে অবস্থান ও তাতে সালাত আদায় করাই তাদের জন্য উত্তম।
নারী স্বীয় কাপড় ও পরিপূর্ণ পর্দা দ্বারা আচ্ছাদিত থাকবে, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন:
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে নারীরা সালাত পড়ত, অতঃপর তারা তাদের চাদর দিয়ে আচ্ছাদিত হয়ে ফিরে যেত, অন্ধকারের জন্য তাদেরকে চেনা যেত না”।
সুগন্ধি ব্যবহার করবে না: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
»لا تمنعوا إماء الله مساجد الله، وليخرجن تفلات«
“আল্লাহর বান্দিদের আল্লাহর মসজিদে নিষেধ করো না, আর অবশ্যই তারা সুগন্ধি ত্যাগ করে বের হবে”।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
»أيما امرأة أصابت بخورا فلا تشهدن معنا العشاء الآخرة«
ইমাম মুসলিম রহ. বর্ণনা করেন, ইবন মাস‘উদের স্ত্রী যায়নাব বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বলেছেন:
“তোমাদের কেউ যখন মসজিদে উপস্থিত হয়, সুগন্ধি স্পর্শ করবে না”।
নারীদের মসজিদে যাওয়া বৈধ যদি তার সাথে ফিতনা ও ফিতনাকে জাগ্রতকারী বস্তু না থাকে, যেমন সুগন্ধি জাতীয় বস্তু ইত্যাদি। তিনি আরো বলেন: হাদীস প্রমাণ করে যে, পুরুষরা নারীদেরকে তখন অনুমতি দিবে যখন তাদের বের হওয়ার মধ্যে ফিতনার আশঙ্কা নেই। যেমন সুগন্ধি অথবা অলঙ্কার অথবা সৌন্দর্যহীন অবস্থায়”। সমাপ্ত।
নারীরা কাপড় ও অলঙ্কার দ্বারা সুসজ্জিত হয়ে বের হবে না: আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন:
“নারীরা যা আবিস্কার করেছে বলে আমরা দেখছি তা যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখতে পেতেন তাহলে অবশ্যই তাদেরকে মসজিদ থেকে নিষেধ করতেন। যেমন বনু ইসরাইলরা তাদের নারীদের নিষেধ করেছে”।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার কথা (নারীরা যা আবিস্কার করেছে বলে আমরা দেখছি তা যদি রাসূলুল্লহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখতে পেতেন) প্রসঙ্গে বলেন: অর্থাৎ সুন্দর পোশাক, সুগন্ধি, সৌন্দর্য চর্চা ও বেপর্দা। বস্তুত নবী যুগে নারীরা বের হত উড়না, কাপড় ও মোটা চাদর পেঁচিয়ে”।
“নারীদের উচিত যথাসম্ভব ঘর থেকে বের না হওয়া, যদিও সে নিজের ব্যাপারে নিরাপদ হয়, কিন্তু মানুষেরা তার থেকে নিরাপদ নয়। যদি বের হওয়ার একান্ত প্রয়োজন হয়, তাহলে স্বামীর অনুমতি নিয়ে অপরিচ্ছন্ন পোশাকে বের হবে। আর খালি জায়গা দিয়ে হাঁটবে, প্রধান সড়ক ও বাজার দিয়ে হাঁটবে না, কণ্ঠস্বর যেন কেউ না শুনে সতর্ক থাকবে, রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটবে মাঝখান দিয়ে নয়”।
কাতারে নারীর অবস্থান
নারী একা হলে পুরুষদের পিছনে একাই কাতার করবে। কারণ, আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিয়ে সালাত পড়লেন, তিনি বলেন: আমি এবং এক ইয়াতীম তার পিছনে দাঁড়ালাম, আর বৃদ্ধা আমাদের পিছনে দাঁড়িয়েছে”।
তার থেকে আরো বর্ণিত, আমাদের বাড়িতে আমি ও ইয়াতীম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিছনে সালাত পড়েছি, আর আমার মা উম্মে সুলাইম আমাদের পিছনে ছিল”।
যদি উপস্থিত নারীদের সংখ্যা বেশি হয়, তাহলে তারা পুরুষদের পিছনে এক বা একাধিক কাতার করে দাঁড়াবে। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাচ্চাদের সম্মুখে পুরুষদের দাঁড় করাতেন, বাচ্চারা পুরুষদের পিছনে দাঁড়াত, আর নারীরা দাঁড়াত বাচ্চাদের পিছনে। এ জাতীয় হাদীস ইমাম আহমদ বর্ণনা করেছেন। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
“পুরুষদের সর্বোত্তম কাতার প্রথম কাতার, নিম্নমানের কাতার শেষেরটা, আর নারীদের সর্বোত্তম কাতার শেষেরটা, নিম্নমানের কাতার শুরুরটা”।
আরো পড়ুনঃ নামাজের কাতারে গুরুত্ব সম্পর্কে
এ দু’টি হাদীস প্রমাণ করে নারীরা পুরুষদের পিছনে কাতারবদ্ধ দাঁড়াবে, তাদের পিছনে বিচ্ছিন্নভাবে সালাত পড়বে না, হোক সেটা ফরয সালাত অথবা তারাবীহের সালাত।
ইমাম সালাতে ভুল করলে নারীরা তাকে সতর্ক করবে ডান হাতের কব্জি দিয়ে বাম হাতের পৃষ্ঠদেশে থাপ্পড় মেরে বা আঘাত করে। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
“যখন সালাতে তোমাদের কোনো সমস্যা হয়, তখন পুরুষরা যেন তাসবীহ বলে এবং নারীরা যেন তাসফীক করে (হাতকে হাতের উপর মারে)”। সালাতে কোনো সমস্যা হলে নারীদের জন্য তাসফীক করা বৈধ। সমস্যার এক উদাহরণ: ইমামের ভুল করা, কারণ নারীর শব্দ পুরুষের জন্য ফিতনার কারণ হয়, তাই তাকে হাতে তাসফীক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কথা বলার নয়।
ইমাম সালাম ফিরালে নারীরা দ্রুত মসজিদ ত্যাগ করবে, পুরুষরা বসে থাকবে, যেন পুরুষরা তাদের সাক্ষাত না পায়। কারণ, উম্মে সালামাহ বর্ণনা করেন,
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে ফরযের সালাম শেষে নারীরা দাঁড়িয়ে যেত আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও যেসব পুরুষ তার সাথে সালাত পড়েছে বসে থাকত, যতক্ষণ আল্লাহ চাইতেন। যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠতেন তারাও উঠত।
ইমাম যুহরী রহ. বলেন: “আল্লাহ ভালো জানেন, তবে আমরা তার কারণ হিসেবে মনে করি নারীরা যাতে বাড়ি চলে যেতে সক্ষম হয়”।
ইমামের জন্য মুস্তাহাব হচ্ছে মুক্তাদীদের অবস্থা খেয়াল রাখা, অন্যায় বা হারামে পতিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে তা থেকে সাবধানতা অবলম্বন করা, সন্দেহমূলক কিছু ঘটার সম্ভাবনা থাকলে তা থেকে দূরে থাকা, ঘর তো দূরের কথা রাস্তা-ঘাটেও নারী-পুরুষের মধ্যে মেলামেশা হওয়ার বিষয়টি অপছন্দনীয় হিসেবে বিবেচনা করা। মহিলারা জামাতে সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয়ে পুরুষদের থেকে ভিন্নঃ
১।পুরুষদের মত জামাতে সালাত আদায় করা তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়।
২।তাদের মহিলা ইমাম তাদের মাঝ বরাবর দাঁড়াবে (সামনে নয়)
৩।মহিলা যদি একজন হয় তবে সে পুরুষের পিছনে দাঁড়াবে, পুরুষের পাশে নয়, যা পুরুষের বিধান থেকে ভিন্নতর।
৪।যখন মহিলারা পুরুষদের সাথে সালাত আদায় করবে তখন তাদের শেষ কাতার প্রথম কাতার থেকে উত্তম।’... শেষ।
এ সব কিছু থেকে জানা গেল যে, নারী-পুরুষদের মেলামেশা হারাম।
ঈদের সালাতে নারীদের বের হওয়ার বিধান
উম্মে ‘আতিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নির্দেশ করেছেন, যেন আমরা ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহায় ঋতুমতী, যুবতী ও অবিবাহিতা নারীদের বের করি, তবে ঋতুমতী নারীরা সালাত থেকে বিরত থাকবে, অপর বর্ণনায় আছে: মুসল্লীদের থেকে দূরে থাকবে এবং কল্যাণ ও মুসলিমদের দো‘আয় অংশ গ্রহণ করবে।
“এ হাদীস ও এ জাতীয় অন্যান্য হাদীস স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, দুই ঈদের দিন নারীদের ঈদগাহ যাওয়া বৈধ, এতে কুমারী, বিধবা, যুবতী, বৃদ্ধা, ঋতুমতী ও অন্যদের মাঝে কোনো পার্থক্য নেই, তবে যদি সে যদি ইদ্দত পালনকারী হয় অথবা তার বের হওয়ায় ফেতনার আশঙ্কা থাকে অথবা কোনো সমস্যা হলে বের হবে না।
“মুমিন নারীদের বলা হয়েছে যে, জামা‘আত ও জুমআয় উপস্থিত হওয়া অপেক্ষা ঘরে সালাত পড়াই তাদের জন্য অধিক উত্তম তবে ঈদ ব্যতীত। ঈদে তাদের উপস্থিতির আদেশ রয়েছে, কয়েকটি কারণে, আল্লাহ ভালো জানেনঃ
১।ঈদ বছরে মাত্র দু’বার, তাই তাদের উপস্থিতি গ্রহণযোগ্য পক্ষান্তরে জুমু‘আ ও জামা‘আত এরূপ নয়।
২।ঈদের সালাতের কোনো বিকল্প নেই, পক্ষান্তরে জুমু‘আ ও জামা‘আতের বিকল্প আছে, কারণ ঘরে জোহর আদায় করাই নারীর জন্য জুমু‘আ আদায় করা।
৩।ঈদের সালাতের জন্য বের হওয়া মূলত আল্লাহর যিকিরের জন্য ময়দানে বের হওয়া, যা কয়েক বিবেচনায় হজের সাথে মিল রাখে। এ জন্য হাজীদের সাথে মিল রেখে হজের মৌসুমেই বড় ঈদ হয়। সমাপ্ত।
আরো পড়ুনঃ ঈদের নামাজের সুন্নতের নিয়মগুলো
সাধারণ নারীরা যাবে, বিশেষ মর্যাদার অধিকারী নারীরা যাবে না।
সাধারণ নারীদের ঈদের সালাতে হাযির হওয়া মুস্তাহাব, সম্ভ্রান্ত ও বিশেষ মর্যাদার অধিকারী নারীদের সালাতে বের হওয়া মাকরূহ... অতঃপর বলেন: তারা যখন বের হবে নিম্নমানের কাপড় পরিধান করে বের হবে, আবেদনময়ী কাপড় পরিধান করে বের হবে না, তাদের জন্য পানি দ্বারা পরিচ্ছন্ন হওয়া মুস্তাহাব, তবে সুগন্ধি ব্যবহার করা মাকরূহ। এ বিধান বৃদ্ধা ও তাদের ন্যায় নারীদের জন্য যারা বিবাহের ইচ্ছা রাখে না, তবে যুবতী, সুন্দরী এবং বিবাহের ইচ্ছা রাখে এরূপ নারীদের উপস্থিত হওয়া মাকরূহ। কারণ, এতে তাদের ওপর ও তাদের দ্বারা অন্যদের ফিতনার আশঙ্কা থাকে। যদি বলা হয়, এ বিধান উল্লিখিত উম্মে আতিয়্যার হাদীসের বিপরীত, আমরা বলব: আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে সহীহ বুখারী ও মুসলিমে এসেছে, তিনি বলেছেন: “নারীরা যা করছে তা যদি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখতেন অবশ্যই তাদেরকে নিষেধ করতেন, যেরূপ বনু ইসরাঈলের নারীদের নিষেধ করা হয়েছে।” দ্বিতীয়ত প্রথম যুগের তুলনায় বর্তমান যুগে ফিতনার উপকরণ অনেক বেশি। আল্লাহ তা‘আলা ভালো জানেন।
নামাজের বৈঠকে দোয়া সমূহ বাংলায়
তাশাহুদ এর দোয়াঃ
আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস্ সালাওয়াতু, ওয়াত্ তাইয়িবাতু। আস্সালামু ‘আলাইকা আইয়্যুহান নাবীয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। আস্সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস্ সালিহীন। আশহাদু আল্লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশ্হাদু আননা মুহাম্মাদান আদুহু ওয়া রাসুলুহু।
অর্থ: কি মৌখিক, কি দৈহিক, কি আর্থিক সকল ইবাদাত এক মাত্র আল্লাহ’র জন্য/সমস্ত সম্মানজনক সম্বোধন আল্লাহর জন্যে। সমস্ত শান্তি কল্যাণ ও পবিত্রার মালিক আল্লাহ। হে নবী, আপনার উপর আল্লাহ’র শান্তি, রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক) আসসালামু আলায়না ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সোয়ালেহিন (আমাদের উপর এবং সৎকর্মশীল বান্দাদের উপর আল্লাহ’র শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ব্যতিত অন্য কোন ইলাহ নেই, আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মাদ (সা:) আল্লাহ’র বান্দা ও রাসুল।
দরুদ শরীফঃ
আল্লাহুম্মা সাল্লিআলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ, কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহীম, ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ, কামা বারাকতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহীম, ইন্নাকা হামীদুম মাজিদ।
অর্থ: হে আল্লাহ! মুহাম্মদ (সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়া সাললাম) এবং তাঁহার বংশধরগণের উপর ঐরূপ রহমত/প্রশংসা অবতীর্ণ কর যেইরূপ রহমত/প্রশংসা হযরত ইব্রাহিম এবং তাঁহার বংশধরগণের উপর অবতীর্ণ করিয়াছ। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসাভাজন এবং মহামহিম। হে আল্লাহ, মুহাম্মদ (সা:) এবং তাঁহার বংশধরগণের উপর সেইরূপ অনুগ্রহ কর যে রূপ অনুগ্রহ ইব্রাহীম এবং তাঁহার বংশরগণের উপর করিয়াছ। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসাভাজন এবং মহামহিম।
দোয়া মাসুরাঃ
আল্লাহুম্মা ইন্নি যলামতু নাফসি যুলমান কাসিরা। ওয়ালা ইয়াগ ফিরুয যুনুবা ইল্লা আনতা ফাগফির লি। মাগফিরাতাম মিন ইনদিকা। ওয়ার হামনি। ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহিম।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আমার নিজ আত্মার উপর বড়ই অত্যাচার করেছি, গুনাহ মাফকারী একমাত্র আপনিই। অতএব আপনি আপনার হতেই আমাকে সম্পূর্ণ ক্ষমা করুন এবং আমার প্রতি দয়া করুন। নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল দয়ালু।
সালামঃ
উপরে বর্ণিত দোয়া পাঠ শেষে প্রথমে ডান দিকে এবং পরে বামদিকে মাথা ঘুরিয়ে সালাম দিতে হবে। খুবই নম্রতার সাথে ও ধীরে উভয়দিকে মাথা ঘোরাতে হবে। দ্রুত এবং তাড়াহুরা করে সালাম ফেরানো একমদমই উচিত নয়। উভয় দিকে মাথা ঘুরিয়ে স্থিরাবস্থায় সালামের দোয়া পাঠ করতে হবে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url